বৈশ্বিক শান্তির জন্য ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে গোটা মানবজাতিকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে সব ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ-সংঘাত এবং নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করারও আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় বিকেলে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বরাবরের মতো এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। এটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শেখ হাসিনার ১৯তম ভাষণ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব- যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে বাবা-মাকে হারানোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই যুদ্ধের ভয়াবহতা, হত্যা-ক্যু-সংঘাতে মানুষের যে কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা হয়, ভুক্তভোগী হিসেবে আমি তা উপলদ্ধি করতে পারি। তাই যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, মানবকল্যাণ চাই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। আমার আকুল আবেদন, যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ। আসুন, সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা একটি উত্তম ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যাই।
আলাপ আলোচনাই বিরোধ-সংঘাত মেটানোর সর্বোত্তম উপায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মত বৈরীপন্থা কখনও কোন জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়।
সংকট উত্তরণে ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সঙ্কটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধান নিরূপণ করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।
সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাংলাদেশের এই নীতির কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরীতা নয়”। বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রতিপাদ্য-উদ্ভূত জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে।
এ বছরের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য-“একটি সঙ্কটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ: আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাসমূহের রূপান্তরমূলক সমাধান”।
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের প্রতিপাদ্যটি এ সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলায় এবং আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ আকাক্সক্ষার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/sunbangla/sunbanglanews.com/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/sunbangla/sunbanglanews.com/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply